আসছে নুরদের নতুন রাজনৈতিক দল, থাকছে চমক

আসছে নুরদের নতুন রাজনৈতিক দল, থাকছে চমক

শুরুটা ২০১৮ সালের কোটা সংস্কার আন্দোলন থেকে। পরবর্তীতে দীর্ঘ ২৮ বছর পর অনুষ্ঠিত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনে বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ প্যানেল থেকে ভিপি নির্বাচিত হন। তারপর থেকেই ছাত্র আন্দোলন, দেশের গণতন্ত্র ও বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কথা বলে, হামলা-মামলার শিকার হয়ে আলোচনায় নুরুল হক নুর।

২০২০ সালের জুনে তরুণদের নেতৃত্বে একটা নতুন রাজনৈতিক দল তৈরির ব্যাপারে ঘোষণা দেন তিনি। সে লক্ষ্যে কাজও করতে দেখা যায় তাকে। চলতি মাসেই আসছে নুরুল হক নুরের নেতৃত্বাধীন নতুন রাজনৈতিক দলের ঘোষণা।
নতুন রাজনৈতিক দলের প্রস্তুতি ও বিভিন্ন বিষয়ে কথা বলেছেন দৈনিক আগামীর সময় সঙ্গে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন দৈনিক আগামীর সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক ।

দৈনিক আগামীর সময় : অনেকদিন ধরে শোনা যাচ্ছে আপনাদের নতুন রাজনৈতিক দলের নাম ঘোষণা করা হবে সেটির প্রস্তুতি কতটুকু?

নুর : দীর্ঘ দিন ধরে আমরা নতুন রাজনৈতিক দল গঠনের স্বপ্ন দেখছি। সে অনুযায়ী আমরা কাজও করেছি। ইতোমধ্যে আমরা ছাত্র, যুব, প্রবাসী, শ্রমিক, পেশাজীবী অধিকার পরিষদ গড়ে তুলেছি। সব প্রস্তুতি সম্পন্ন, চলতি (সেপ্টেম্বর) মাসের শেষ দিকে, পরিস্থিতি ঠিক থাকলে আমরা আনুষ্ঠানিকভাবে নাম ঘোষণা করতে পারি। তবে আমরা চাচ্ছি বড় পরিসরে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান কিংবা শহীদ মিনারে সমাবেশের মাধ্যমে ঘোষণা করতে। তবে সরকার অনুমতি দেয় কি না এটা নিয়ে আমরা সন্দেহে আছি। একটা রাজনৈতিক দল ঘোষণা হবে এবং কয়েক হাজার লোক একত্রিত হলে তাদের জন্য একটা চাপ। তবে আমরা অনুমতি নেওয়ার চেষ্টা করছি।

দৈনিক আগামীর সময় : নতুন রাজনৈতিক দলের নাম কী হতে পারে?

নুর : বেশ কিছু নাম আমাদের আলোচনায় আছে। যার মধ্যে অন্যতম গণ অধিকার পরিষদ, ডেমোক্রেটিক পার্টি, গ্রিন পার্টি ইত্যাদি। তবে আমাদের অন্যান্য সংগঠনগুলোয় যেহেতু ‘অধিকার’ শব্দটি বিদ্যমান সেহেতু আমরা মূল দলের ক্ষেত্রেও অধিকার শব্দটি রাখার চেষ্টা করব। আমাদের মূল স্লোগান থাকবে ‘জনতার অধিকার, আমাদের অঙ্গীকার’।

দৈনিক আগামীর সময় : দলের নেতৃত্বে কোনো চমক থাকছে কি না…

নুর : একটা নতুন জিনিস সবসময় মানুষকে চমকে দেয়, আকর্ষণ তৈরি করে। আমাদের দলের নেতৃত্বে একটা চমক থাকতে পারে। মানুষ স্বাভাবিকভাবে ভাবতে পারে এরা কোটা সংস্কার আন্দোলন করেছে, ডাকসু নির্বাচন করেছে, আন্দোলন সংগ্রাম করেছে নেতৃত্বে হয়ত এরাই আসবে। আমাদের নেতৃত্বে উল্লেখযোগ্য কিছু মানুষ থাকবে, যারা সরাসরি আমাদের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন না। দেশ বিদেশে গ্রহণযোগ্য এমন ব্যক্তিরা আমাদের দলের নেতৃত্বে থাকবেন। বিশেষ করে মূল দায়িত্বে নতুন একজন মানুষকে দেখা যেতে পারে, সে ক্ষেত্রে এটা একটা চমক হিসেবে থাকবে। এছাড়া আমাদের রাজনৈতিক দলের সংক্ষিপ্ত ঘোষণাপত্রেও চমক থাকবে।

দৈনিক আগামীর সময় : নতুন রাজনৈতিক দলের কর্মসূচি কিংবা পরিকল্পনা সম্পর্কে জানতে চাই… 

নুর : দেশে রাতারাতি ক্ষমতার পালাবদল হলে মানুষের কিংবা রাজনীতিতে গুণগত পরিবর্তন আসবে না। আমাদের অন্যতম প্রধান টার্গেট হচ্ছে রাজনীতিতে একটা গুণগত পরিবর্তন নিয়ে আসা। যারা সৎ, সাহসী, মেধাবী ও ভালো মানুষ তারা যেন রাজনীতিতে আসতে পারে। বর্তমানে সব দলের দিকে তাকালে দেখা যাবে যে, সমাজের স্বীকৃত দুর্নীতিবাজ, দুর্বৃত্ত, অসৎ মানুষ তারাই নেতৃত্বের অগ্রভাবে আছে। আমরা ইউরোপ আমেরিকাসহ বিভিন্ন দেশে একাডেমিশিয়ানদের রাজনীতিতে যে একটা জায়গা থাকে, সেটি বাংলাদেশে নেই। সঠিক মানুষের নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠা করা এবং রাজনীতিটা যে একটা জনসেবা সেভাবে দলকে প্রস্তুত করাই আমাদের লক্ষ্য।

দৈনিক আগামীর সময় : আপনাদের রাজনৈতিক দলের গঠনতন্ত্রে কোনো নতুনত্ব আছে কি না, সে বিষয়ে জানতে চাই…

নুর : আমাদের দেশে রাষ্ট্রপতির ক্ষেত্রে দুইবারের বেশি কেউ রাষ্ট্রপতি হতে পারে না, আমরা চাই প্রধানমন্ত্রীর ক্ষেত্রেও একই নিয়ম কার্যকর হোক। যাতে দুইবারের বেশি কেউ প্রধানমন্ত্রী হতে না পারে। আমাদের দলের গঠনতন্ত্রেও এটা যুক্ত করতে চাই। যেন কেউই দুইবারের বেশি একই পদে থাকতে পারবে না। এখানে নেতৃত্বটা যেন কোনো পরিবার, কোনো গোষ্ঠীর কাছে কুক্ষিগত না থাকে। রাজনৈতিক দলটা একটা গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানের মতো পরিচালিত হবে, সে ধরনের একটা পার্টি, সংগঠন আমরা তৈরি করতে চাই।

দৈনিক আগামীর সময় : আপনাদের দলে কারা যোগ দিচ্ছেন?

নুর : যারা বাংলাদেশের নাগরিক, যারা মুক্তিযুদ্ধ এবং গণতন্ত্রে বিশ্বাস করেন তাদের মধ্যে যারাই রাজনীতি করতে চান, কোনো দলীয় লেজুড়বৃত্তির রাজনীতি নয়, গণমানুষের রাজনীতি করতে চান তাদের জন্য পথ খোলা থাকবে। তবে সমাজে বিতর্কিত, প্রশ্নবিদ্ধ, দুর্নীতিবাজ, বিশেষ করে যারা নানা অপকর্মে জড়িত কিংবা নিষিদ্ধ সংগঠনের সঙ্গে জড়িত তাদের কোনো সুযোগ নেই।

দৈনিক আগামীর সময় : আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে আপনাদের ভাবনা কী?

নুর : দীর্ঘদিন বাংলাদেশে কোনো সুষ্ঠু ভোট হচ্ছে না, মানুষ তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারছে না। আমরা মানুষের ভোটাধিকার নিশ্চিত করতে কাজ করব। গণতন্ত্রে বিশ্বাসী, মুক্তিকামী মানুষকে নিয়ে আমরা বৃহৎ আন্দোলন গড়ে তুলব। আমরা বেঁচে থাকতে আর বিনাভোটে কাউকে জিততে দেবো না। তবে আগামী নির্বাচনে যদি আমরা অংশ নিই তবে জোটবদ্ধভাবে নয়, এককভাবে নিজেদের দলের ব্যানারে আমরা নির্বাচন করব।

দৈনিক আগামীর সময় : সময় দেওয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।

নুর : আপনাকেও ধন্যবাদ।

আপনি আরও পড়তে পারেন